রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ক্রীড়াঙ্গনে প্রভাব পড়েছে ব্যাপক। বিশেষ করে ফুটবল দলবদলে ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তাই আজ শনিবার বাফুফে ভবনে বেশ কয়েকজন ফুটবলার কয়েক দফা দাবি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শেখ রাসেল ও শেখ জামাল ক্লাব দলবদলে অংশ নেয়া সবচেয়ে অনিশ্চিত। এই দুই ক্লাব কথাবার্তা চুড়ান্ত করা ফুটবলাররা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তায়।
প্রিমিয়ার লিগ হচ্ছে খেলোয়াড়দের রুটি-রুজির প্রধান খাত। লিগে ক্লাবগুলো অংশ না নিলে ফুটবলারদের ভবিষ্যত হয়ে পড়বে অনিশ্চিত! এমতাবস্থায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে এক ছাতার নিচে এসে দাঁড়িয়েছেন ফুটবলাররা। আজ শনিবার ১৭ আগস্ট ৭ দফা দাবিতে বাফুফে ভবনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। আগামীকাল ১৮ আগস্ট রোববার আরো বড় কর্মসূচি নিয়ে বাফুফে ভবনে জড়ো হবেন। তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানাতে জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলাররা থাকবেন বলেও নিশ্চিত করেছেন মানববন্ধনে অংশ নিতে আসা ফুটবলাররা।
৭ দফা দাবি সম্বলিত চিঠি ফুটবলাররা বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির কাছে হস্তান্তর করতে আসেন। কিন্তু লিগ কমিটির প্রতিনিধিদের কেউ ভবনে না থাকায় খেলোয়াড়রা তাদের দাবির চিঠিটি বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের হাতে তুলে দেন।
৭ দফা দাবিগুলো হলো-
১। অনতিবিলম্বে দলবদল পেছানো নিশ্চিত করতে হবে।
২. লিগে প্রত্যেক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. দায়সারা লিগ চালানো যাবে না।
৪. যে দলগুলো খেলবে না বলছে ওই টিমের কনফার্ম করা খেলোয়াড়দের দায়ভার কে নেবে?
৫. এ বছর বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়া লিগ চালাতে হবে।
৬. যে সকল পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ইতোপূর্বে ক্লাবের স্পন্সর ছিল তাদের পুনরায় ক্লাবের স্পন্সর করার ব্যবস্থা করতে হবে এবং
৭. যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে সকল খেলোয়াড়দের একটি মিটিং আগামীকালের মধ্যে ব্যবস্থা করতে হবে।
গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় দল এবং আবাহনীয় ফুটবলার রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি ফুটবল ফেডারেশনে আমাদের কিছু দাবি জানাতে। হঠাৎ করেই কিছু ক্লাব এবারের মৌসুমে দল করবে না বলে জানিয়েছে। এতে করে আমাদের অনেক ফুটবলারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। প্রায় ১০০ জনের উপর রানিং ফুটবলার কোনও দল পাচ্ছে না। আমরা চাই ফুটবল ফেডারেশন এই বিষয়ে চেষ্টা করুক। দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে তাদের খেলানোর বিষয়ে রাজি করাক। এছাড়া আমরা বর্তমান সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে বসতে চাই। বাফুফের সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছি যেন আগামী কালের মধ্যে আমাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়।’
সবশেষ লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর জার্সিতে খেলা ডিফেন্ডার রায়হান হাসান বলেন, ‘দিনকে দিন প্রিমিয়ার লিগে দলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ৫ বছর আগে ১৩ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রিমিয়ার লিগ। এরপর প্রতি বছর দল কমতে কমতে সবশেষ লিগে অংশ নেয় ১০টি দল। এখন যদি সেই সংখ্যা কমে ৬/৭ তে দাঁড়ায় তাতে কিভাবে খেলব আমরা। এমন দায়সারা লিগে আমরা অংশ নিতে চাই না। আমরা চাই সবার অংশগ্রহণ। ফুটবল বাঁচাতে সবার এগিয়ে আসা উচিত। কারণ আমরা ফুটবলার এর বাইরে আমাদের কোনো পরিচয় নেই। এটাই আমাদের রুটি-রুজি।’
সংবাদ সম্মেলনে বাফুফে প্রতিনিধি সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেন, `দলবদলের সময় ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ছিল। ফিফার অনুমতিক্রমে আরো তিনদিন বর্ধিত করে ২২ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। খেলোয়াড়দের দাবির কথা আমি শুনেছি। আমরা ক্লাবগুলোর সঙ্গে কথা বলে এটার সমাধানের দ্রুত চেষ্টা করব। এর বাইরে খেলোয়াড়দের সঙ্গে মাননীয় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সাক্ষাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।‘
আশরাফুল ইসলাম রানা, শহিদুল আলম সোহেল, তৌহিদুল আলম সবুজ, রেজাউল করিম রেজা, ইমন মাহমুদ বাবু, হাবিব বিপু, রায়হান হাসান, রহমত মিয়া, শাকিল আহমেদ, রিয়াদুল হাসান রাফি, মো. নাঈম, ফয়সাল, ওমর বাবু, আবু সাঈদ, মেহেদী রয়েল, মান্নাফ রাব্বি, আমিনুর রহমান সজিব, মোনায়েম খান রাজু, টুটুল, মিনহাজ বাল্লু, নাজিম, মিঠু, মনির, সাজ্জাদ, রহিম, তাসিন, রুবেল, সুজন, পাপ্পু, লাল, বাবলু, সাহেদ, ইমনসহ জাতীয় দল ও প্রিমিয়ার লিগে বিভিন্ন ক্লাবের জার্সিতে খেলা প্রায় ৫০ জনের একটি দল আজ বাফুফে ভবনে এসেছিলেন।